প্রেস বিজ্ঞপ্তি)

কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারের অধিনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় – গোলাম মোহাম্মদ কাদের

সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যার্থ- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আগষ্ট -২০২২ : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোন আস্থা নেই। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে, কারচুপি করতেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম-এ ভোট গ্রহণ করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকে বারবার সংবিধান কাটাকাটি করে এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এখন সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে। কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারের অধিনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে একথা বলা-ই যায়। একই নির্বাচন কমিশন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে তা সম্ভব হয়নি। কারণ, কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রার্থীদের সাথে অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনে হলে কখনোই লেভেল প্লেইং ফিল্ড হয় না। মুক্তিযুদ্ধে চেতনা অনুযায়ী সমতা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দুর্ণীতিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী, আমলা আর রাজনীতিবীদদের একটি চক্র ব্যবসার নামে দেশে লুন্ঠন করছে। রাজনীতির অবস্থা এমন হয়েছে যে, নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে, তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশের মানুষ এমন রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায় না। তিনি বলেন, কেউ দেশ ও মানুষের কথা বললেই তাকে দমিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয়ে কৃষক শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন। এসময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

এসময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, এমন বালাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। দেশে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নেই। গণভবনের একজন কর্মচারীর যে সম্মান আছে, তা এখন মন্ত্রী ও এমপিদেরও নেই। সরকারি কর্মচারীরা এখন লাগামহীন। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার ভারসম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি বলেন, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার আদায়ের জন্যই এখন কট্টর বিএনপি ও কট্টর আওয়ামী লীগ থেকে সম-দূরত্ব বজায় রেখে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে একই মোহনায় হাজির করতে হবে। তিনি বলেন, যৌবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেমে পড়েছি পরে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও ভালোবেসেছি। দেশ ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধু ও পল্লীবন্ধুর ভালোবাসা ছিলো সব কিছুর উর্ধ্বে। বঙ্গবন্ধু ও পল্লীবন্ধুর ওপর সাধারণ মানুষের এখনো গভীর অনুরাগ আছে, এটি কাজে লাগিয়ে আমরা মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ একজন সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি গঠন করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরেও রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থান দেখিয়েছেন। আবার জেলে থেকেই দুইটি নির্বাচনে ৫টি করে আসনে জয় লাভ করে পল্লীবন্ধু ইতিহাস রচনা করেছেন। তিনি বলেন, মৃত এরশাদ জীবিত এরশাদের চেয়েও বেশি শক্তিশালী।

তিনি বলেন পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে জিএম কাদের এর গ্রহণযোগ্যতা আছে। কোন কুটকৌশল নয় শুধু সাহস নিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়ালেই সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানা হতে পারে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল- বর্তমান সরকার মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যার্থ হয়েছে।

এসময় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রমনা একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রক্তপাতহীন ভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন, ঠিক তেমনিভাবেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। রক্তপাত ঘটিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাননি তিনি। পল্লীবন্ধুর সরকার পরিচালনায় উন্নয়ণ এবং সুশাসনের ইতিহাস এখনো দেশের মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণে রেখেছেন।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন আর কারো জোটে নেই। কারো বি-টিম হয়েও রাজনীতির মাঠে নেই জাতীয় পার্টি। নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল ঘুরে সাধারণ মানুষের দরজায় যাবে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেনি, প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বঙ্গবন্ধুর জন্য কাদের সিদ্দিকীর মত এত ত্যাগ আর কারো নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই আমরা পল্লীবন্ধুর অসীম র্কীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যাবো।

কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন ধার করে মানুষ এনে মন্ত্রী বানাতে হচ্ছে তাদের। মন্ত্রীরা অসংলগ্ন কথা বলেন। একেকজন একেকরকম কথা বলছেন। অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের জন্য সরকার ব্যার্থ হয়েছে।

কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধু একজন সৈনিক থেকে রাজনীতিতে এসে উন্নয়ণের ইতিহাস রচনা করেছেন। দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ঐতিহ্য আছে। জাতীয় পার্টি আর কারো ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হবে না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই জাতীয় পার্টি পল্লীবন্ধুর স্বপ্নে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, দেশে সোনা এখন তামা হয়ে যাচ্ছে, রড হচ্ছে বাঁশ আর ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। অথচ পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পেরেছেন, পেট ভরে খেতে পেরেছেন। তাই দেশের মানুষ আবারো জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়।

জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার।

খন্দকার দেলায়ার জালালী

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর

প্রেস সেক্রেটারি – ০২

error: Content is protected !!